সারা দেশেই শীত পড়েছে। সকালে ঘন কুয়াশার চাঁদরে ঢাকা থাকে প্রকৃতি। হিমেল হাওয়ার সঙ্গে কনকনে শীত অনুভ‚ত হচ্ছে। জীবিকার তাগিদে বের হওয়া শ্রমজীবী মানুষেরা বিপাকে পড়েছেন।
গত কয়েকদিন ধরেই মাদারীপুর জেলার শিবচরে শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। বিশেষ করে ছিন্নমূল ও চরাঞ্চলের খেটে খাওয়া মানুষ ও গবাদিপশু নিয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন।
মঙ্গলবার (০৩ জানুয়ারি) বেলা ১১টা পর্যন্ত সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। গত কয়েকদিন থেকে ঘন কুয়াশা সঙ্গে শীতের তীব্রতা বেড়ে চলেছে। এতে শিবচর উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ পদ্মা ও আড়িয়াল খাঁ বেষ্টিত নদ-নদীর চরাঞ্চলের দুঃস্থ্য ও নিম্ন আয়ের মানুষ শীত বস্ত্রের অভাবে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।
শিবচরে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মধ্যরাত থেকে পড়ছে ঘন কুয়াশা, বাড়ছে ঠান্ডার মাত্রা। কুয়াশায় ঢাকা পড়ছে চারদিক। ফলে দিনের বেলায়ও হেড লাইট জ্বালিয়ে চলছে যানবাহন। শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিপাকে পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষ। এছাড়া শিশু ও বয়স্কদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বেশি ভোগান্তিতে পড়েছে নদীর তীরবর্তী চরাঞ্চলের মানুষরা। উষ্ণ কাপড়ের অভাবে দুঃস্থ ও অসহায় মানুষদের কষ্ট দিন দিন বেড়েই চলছে।
চরজানাজাতের বাসিন্দারা জানান, শীতের সময় চরের মানুষের দুর্ভোগ হয় বেশি। ধু-ধু বালুচর, চারপাশে গাছগাছালিও নেই। নদী ভাঙনের কারণে ভাঙা ঘরবাড়িতে হু হু করে হিম বাতাস ঢোকে। কোনো রকমে কাঁথ-কাপড় মুড়িয়ে শীত পার করতে হচ্ছে। এছাড়াও খুব শীত পড়লে খড়কুটো জ্বালিয়ে তাপ নিতে হয়।
কাঁঠালবাড়ি এলাকার দিনমজুর ইব্রাহিম বলেন, শীতের কারণে মাঠে কাজ করতে কষ্ট হয়। দিনেও অনেক বেলা পর্যন্ত কুয়াশা থাকে। তাছাড়া অনুদান হিসেবে যে কম্বল পাই, তাতে শীত নিবারণ হয় না।
বন্দরখোলা এলাকার আকবর আলী, হাসমত আলী ও লুনা বেগমসহ অনেকেই জানান, চরের মানুষজন গরমকালে হাট-বাজার থেকে দেরি করে ফিরলেও এখন শীতের কারণে উল্টো হয়েছে। অন্ধকার নামার আগেই বাজার করে আনতে হচ্ছে। এরপর তাড়াতাড়ি রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ছে সবাই। বেলা উঠলেই কাজে যোগ দিচ্ছে। শীতের কারণে চরের মধ্যে শিশু ও বয়স্করা বেশি কষ্টে রয়েছে।
শিবচর উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানা গেছে, চলতি শীত মৌসুমে সরকারিভাবে এ পর্যন্ত উপজেলায় ৯ হাজারের মতো কম্বল এসেছে। সেগুলো ১৯ টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার হতদরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করা হচ্ছে। শীতবস্ত্রগুলো ইউনিয়ন ভিত্তিক চেয়ারম্যানদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।
শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রাজিবুল ইসলাম বলেন, সরকারি ভাবে ৯ হাজারেরও বেশি শীতবস্ত্রের বরাদ্দ রয়েছে এ উপজেলায়। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে দরিদ্র মানুষকে এই শীতবস্ত্র দেওয়া হয়েছে। এই শীতে যেন কোনো মানুষ কষ্ট না পায় সেদিকে লক্ষ্য করেই আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।