শিবচরে গাছিরা ব্যস্ত খেজুর গাছে নলি গাঁথায়

অন্যান্য কৃষি

নিজস্ব প্রতিবেদক

আর মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে পুরোদমে শীত শুরু হবে। এরই মধ্যে ভোরে লতা-পাতা আর ঘাসের উপর ঝরে পড়ছে শিশির বিন্দু। শিশির ভেঙে গ্রামের চাষিরা ছুটে যাচ্ছে সবুজ ধানের ক্ষেতে। শীত শুরুর সঙ্গে সঙ্গে খেজুর গাছ প্রস্তুত করতে ব্যস্ত সময় পার করছে গ্রামের গাছিরা।

শীতের আমেজ শুরু হওয়ার সাথে সাথে মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার গাছিরা খেজুরের রস আহরণের জন্য ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছিরা। চলছে গাছ তৈরি ও নলি বসানোর কাজ। খেজুরের রস সংগ্রহে গাছ তৈরিতে তাই শীতের শুরুতে দম ফেলার মতো যেন সময় নেই গাছিদের।

বাংলার ঘরে ঘরে শীতকাল মানেই অনেকটা পিঠাপুলির উৎসব। কদিন পরেই গাছ থেকে গাছিদের প্রক্রিয়াজাত করা খেজুরের রস দিয়ে তৈরি করা হবে চিড়ার মোয়া, গুড় ও পাটালি। শীতের সকালে গ্রামের গৃহস্থ বাড়িতে খেজুরের রস দিয়ে বানানো হবে মুখরোচক পিঠা, পায়েস, ক্ষীর।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, জমির আইল, রাস্তার পাশে এমনকি পুকুর পাড়ে সারি- সারি খেজুর গাছের ডাল কেটে পরিষ্কার করছেন। হাতে দা, কোমরে রশি বেঁধে নিপুণ হাতে গাছ তৈরি করছেন গাছিরা। এরই মধ্যে অনেকে রস সংগ্রহের জন্য গাছে নলি গাঁথাও শুরু করেছেন। গাছিরা বলছেন, আর মাত্র ১০-১৫ দিন পরই রস পাওয়া শুরু হবে। খেজুর গাছ থেকে রস পাওয়ার জন্য তৈরি করাকে তারা আঞ্চলিকভাবে ‘গাছ তোলা’ বলে থাকেন। প্রথমবার গাছ তোলার সাত দিন পরই হালকা কেটে নলি লাগানো হয়। পরে সেখান থেকে রস সংগ্রহ করা হয়ে থাকে।

গাছি আব্দুর রহমান বলেন, বর্তমানে যে হারে খেজুর গাছ হারিয়ে যেতে বসেছে, তাতে এক সময় হয়তো আমাদের দেশে খেজুর গাছ থাকবে না। এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে চাইলে আমাদের সবার উচিত তালগাছের মতো বেশি বেশি খেজুর গাছ লাগানো এবং তা যত্ন সহকারে বড় করা।

নূর-ই-আলম চৌধুরী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমিনুল ইসলাম জানান, অনেকেই খেজুর গাছ ইটভাটায় বিক্রি করে দিচ্ছেন। এতে করে গাছের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। তাই শীতের সকালে সোনালী রোদের সঙ্গে মিষ্টি খেজুরের রসের স্বাদ মানুষ ভুলতে বসেছে।

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা পার্থ প্রতীম হীরা জানান, শিবচরে খেজুরের রস আহরণে গাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত গাছিরা। সেখান থেকে গাছিরা খেজুর রস সংগ্রহ করে বিভিন্ন ধরনের পিঠা ও মিষ্টান্ন তৈরি করে নিকটস্থ বাজারে বিক্রয় করে আর্থিকভাবে লাভবান হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *