এস.এম.দেলোয়ার হোসাইন:
হালকা বাতাসে সমুদ্র উপকূলীয় বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে কৃষকের স্বপ্নের সোনালি ধান। বাতাসে ঢেউয়ের মতো দোল খাচ্ছে সোনালী ধান। আর এমন ঢেউয়ে দুলে উঠছে প্রকৃতি। এতে বুক ভরা স্বপ্ন দেখছেন কৃষকরা। তাই প্রতিটি কৃষক পরিবারের চোখে মুখে লেগে আছে সোনালি স্বপ্ন পূরণের ছাপ।
পাকা আমন ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ততা বেড়েছে কৃষকদের। ইতোমধ্যে ধান কাটা শুরু করেছেন কৃষকরা। ধান তোলার পর তারা প্রস্তুতি নিচ্ছেন রবিশস্যের। উপজেলা কৃষি অফিস বলছে, আগাম জাতের ধান চাষে কৃষকেরা লাভবান হবেন। ধান ঘরে ওঠার পর সরিষা, ভুট্টা, গম ও শীতকালীন সবজি আবাদে প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে , আমনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ হাজার ৮শ ৭৫ হেক্টর। আবাদ হয়েছে ৪ হাজার ৮শ ৫ হেক্টর জমিতে। হাইব্রিড , স্থানীয় ও উফশী জাতের রোপা আমন ধানের চাষ হয়েছে।
বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মাঠের পর মাঠ জুড়ে কাঁচা-পাকা ধানের ফসলি ক্ষেত যেন দিগন্ত ছুঁয়ে গেছে। নতুন ধান ঘরে তুলতে আগাম জাতের আমনের পাকা ধান কাটতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। আবহাওয়া ভাল থাকায় পাকা ধান কেটে জমিতে শুকানো হচ্ছে। বসে নেই কৃষাণীরাও। তাদেন ব্যস্ততা ধান মাড়াই ও গোলায় উঠানো নিয়ে। তবে ফরিয়া বা মধ্যস্বত্বভোগীদের আনাগোনা আর তৎপরতায় ফসলের কাঙ্ক্ষিত মূল্য পাওয়া নিয়ে কৃষকদের মধ্যে রয়েছে শঙ্কা।
কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার আগাম জাতের ধানের ফলন ভাল হয়েছে। তিন ফসলি এসব জমির আগাম জাতের ধান কাটা শেষে এই অঞ্চলের কৃষকেরা কলাই, সরিষা, ভুট্টা, আলু শস্যে ব্যস্ত হয়ে পড়বেন বলেও জানান কৃষকেরা।
উপজেলার সন্যাসীরচর ইউনিয়নের কৃষক মোতালেব মিয়া বলেন, আমন ধান কর্তন করে জমিতে আলু লাগানোর জন্য গোবর নিয়ে যাচ্ছি। আলহামদুলিল্লাহ ফলন খুব ভাল হয়েছে। নতুন ধান পেয়ে আমি আনন্দিত। তবে ধানের বাজার ঠিক রাখতে সরকারের যথাযথ নজর আশা করেন তিনি।
বাবুল হাওলাদার নামের আরেক কৃষক বলেন, এ বছর আশানুরূপ ফলনের আশা করছি। যদি কৃষক তার প্রতিটি ফসলের সঠিক মূল্য না পান তাহলে ফসলের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। সরকার অনেক কৃষি পণ্যের দাম নির্ধারন করলেও কৃষক তার যথাযথ মূল্য পান না বলে অভিযোগ করেন তিনি। এজন্য ধানসহ সরকারকে প্রতিটি ফসলের কৃষকদের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করার দাবি জানান তিনি।
বাঁশকান্দি ইউনিয়নের কৃষক মজিবর মাদবর বলেন, প্রথম দিকে বৃষ্টি না থাকায় জমিতে চাষ করতে একটু দেরি হয়েছে। তার পরও এ বছর ক্ষেতের ফসল ভাল। ধান কাটার শ্রমিক পাওয়া গেলে দুই-চার দিনের মধ্যেই ক্ষেতের ধান কাটা হবে।
শিবচর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ে উপজেলার কৃষকদের আমন ধান ক্ষেতের তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। বেশ কয়েক দিন ধরেই আমন ধান কাটা চলছে। অত্র অঞ্চলের কৃষক ধান কেটে রবিশস্য চাষাবাদ করার জন্য দ্রুত ধান কেটে ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এ বছর কৃষকেরা ধানের ভালো ফলন এবং দাম পাওয়ায় অনেক খুশি।