বেতনের পুরোটাই চলে যাচ্ছে বাজারে!

মাদারীপুর শিবচর

এস.এম.দেলোয়ার হোসাইন

শাক-সবজিসহ নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ। বাজার করতেই মাসের বেতন শেষ হয়ে যাচ্ছে স্বল্প আয়ের মানুষের। মাস শেষে পাওয়া বেতনের পুরোটাই চলে যাচ্ছে নিত্যপণ্যের বাজারে! ফলে উপজেলার স্বল্প আয়ের মানুষ বাজার পরিস্থিতি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করছেন।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, বৈরী আবহাওয়ার জন্য এ বছর উপযুক্ত সময়ে শীতের সবজি চাষ শুরু না হওয়ায় প্রায় এক মাস পরে শীতের সবজি আসতে শুরু করেছে। এ কারণেই দাম তুলনামূলক বেশি।

ক্রেতাদের অভিযোগ, বাজারের অন্যসব পণ্যের সাথে তাল মিলিয়েই মৌসুমী সবজি বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে।

সরেজমিনে মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) সকালে উপজেলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি সপ্তাহেই কোনো না কোনো পণ্যের দাম বাড়ছে। সপ্তাহের শেষে বাজার করতে গেলে গত সপ্তাহের বাজারের হিসাব মিলছে না ক্রেতাদের। শীত মৌসুমে বাজারে শীতকালীন শাক-সবজির যথেষ্ট আমদানি থাকলেও সেই তুলনায় দাম বেশ চড়া। শীতকালীন মৌসুমী সবজির সময় এখন, এসময়ে দাম তুলনামূলক কম থাকার কথা হলেও অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ব্যতিক্রম।

বাজারে শীতকালীন সবজির মধ্যে ফুলকপি, বাঁধাকপি, সব রকম শাক-সবজি, লাউ, মুলা, শিম, গাজরসহ অন্যান্য শীতের সবজি দোকানে শোভা পাচ্ছে। বাজারগুলোতে প্রতি কেজি টমেটো ১২০ থেকে ১৩০ টাকা, ফুলকপি ৪০/৫০ টাকা, বাঁধাকপি ৪০ টাকা, শিম ৫০ টাকা, বেগুন ৪০/৫০ টাকা, মুলা ৩০, করল্লা ৬০/৭০ টাকা, গাজর ৮০/১০০ টাকা, পেঁয়াজ ৪০ টাকা, নতুন আলু ৬০ টাকা, লাল শাক, পালং শাক প্রতি আঁটি ২০ টাকা, লাউ সাইজ অনুযায়ী ৬০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

অন্যদিকে মাছ-মাংসের বাজারও অপরিবর্তিত রয়েছে। নদীর মাছের দাম তো আকাশ ছোঁয়া। তবে চাষের রুই, পাঙ্গাস, কই, পাবদা, চিংড়িসহ অন্যান্য মাছের দাম কিছুটা কম ছিল বর্তমানে তাও বেড়েছে। পাঙ্গাস মাছ ১৮০/১৯০ টাকা, পাবদা ৩০০/৩৫০ টাকা, কই মাছ ১৮০/২৫০ টাকা, চিংড়ি কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা, রুই মাছ ২০০/২৫০ টাকা কেজি। বয়লার মুরগির দাম কেজি প্রতি ১৮০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।

মোহাম্মদ শাহিন মিয়া নামে এক এনজিও কর্মী বলেন, মাসের বাজার খরচেই বেতনের বেশির ভাগ টাকা চলে যাচ্ছে। অন্যান্য খরচ করে কোনো সঞ্চয়ের সুযোগ থাকছে না। তাও অনেক হিসাব-নিকাশ করে চলতে হয় ইদানিং। সব কিছুর দাম বাড়তে থাকায় বেশ বিপাকে আছি। গরুর মাংস কেনার সামর্থ্য হয় না।

স্কুলশিক্ষক মিলন হোসেন বলেন, নিত্যপণ্যের সাথে প্রায় সারাবছরই সবজির দাম থাকে চড়া। শীতের সবজি বাজারে উঠলেও তা এখনো দাম কমেনি।

তিনি বলেন, সবজির যে দাম তাতে অন্য বাজারে কুলিয়ে উঠা সম্ভব হবে না। পাইকারি বাজারে সবজির দাম কিছুটা কম হলেও বড়-বড় ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করেই এভাবে সবজির দাম ঊর্ধ্বমুখি রেখেছে।

উপজেলার পাঁচ্চর বাজারে আলাপ হয় বাজার করতে আসা একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে। তারা বলেন, সংসার খরচের বেশির ভাগ টাকা চলে যায় বাজার করতেই। চিকিৎসাসহ অন্যান্য খরচ হলে ধারদেনা করতে হয়। এরকম পরিস্থিতি এখন। প্রতি সপ্তাহেই কোনো না কোনো কিছুর দাম বাড়বেই!’

খুচরা ব্যবসায়ী আলমগীর হোসের বলেন, অন্য বছরে এই সময়টা বাজারে শীতের সবজিতে ভরে যায়। এ বছর তুলনামূলক সরবরাহ কম। বৈরী আবহাওয়ার কারণে সবজির উৎপাদন কম হয়েছে। কিছু দিনের মধ্যে বাজার স্বাভাবিক পর্যায়ে আসবে। সবজি চাষের মূল সময়ে এ বছর বৃষ্টির পানি হয়নি। এ কারণে সবজির উৎপাদন কম। তাই কয়েক মাস আগে থেকেই সবজির দাম চড়া।

তিনি আরও বলেন, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে আমাদের স্থানীয় সবজি ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে স্থানীয় সবজি তেমন নেই বাজারে।

স্বল্প বেতনের চাকরিজীবী আর নিম্ন আয়ের মানুষের দৈনন্দিন বাজারেই চলে যায় বেতনের টাকা। এ কারণে চিকিৎসাসহ পারিবারিক অন্যান্য খরচ মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *