এস.এম.দেলোয়ার হোসাইন:
আবহমান কাল থেকে বাংলায় নবান্নের উৎসব পালনে খেজুর গুড়ের কদর বেশি। কয়েক দিন ধরে শীত পড়তে শুরু করেছে। তাই শীতের আমেজ শুরু হওয়ার সাথে সাথে মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার গাছিরা খেজুরের রস আহরণের জন্য গাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, শীতের আবহে সবকিছুই যেন বদলাতে শুরু করেছে। এখন থেকেই ব্যস্ততা বেড়েছে শিবচর খেজুর গাছিদের। গাছ কাটা ও রস সংগ্রহের তোড়জোর শুরু করেছেন তারা। সকাল হলেই গাছিরা গাছ কাটা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। হাতে দা নিয়ে ও কোমরে দড়ি বেঁধে নিপুণ হাতে গাছ চাঁচা-ছোলা ও নলি বসানোর কাজ করছেন। কয়েকদিন পরেই গাছে বাঁধানো হবে ভাড়। এরপর রস সংগ্রহ। সেই রস থেকেই খেজুরের গুড় পাটালি তৈরির দৃশ্যও চোখে পড়বে।
গাছি রফিকুল মোল্লা বলেন, শীত আসার আগে এই সময় থেকে গাছ পরিচর্যা ও কাটা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করি। এরপর গাছ থেকে রস সংগ্রহ ও গুড় তৈরির কাজ শুরু হবে।
আরেক গাছি আব্দুর রহমান বলেন, বর্তমানে যে হারে খেজুর গাছ হারিয়ে যেতে বসেছে, তাতে এক সময় হয়তো আমাদের দেশে খেজুর গাছ থাকবে না। এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে চাইলে আমাদের সবার উচিত তালগাছের মতো বেশি বেশি খেজুর গাছ লাগানো এবং তা যত্ন সহকারে বড় করা।
শিবচর উপজেলার বন্দরখোলা ও সন্যাসীরচর ইউনিয়নের কয়েকজন গাছি জানান, সঠিক পরিচর্যা করলে একটি খেজুর গাছ থেকে ৮-১০ বছর পর্যন্ত রস পাওয়া যায়। বর্তমানে খেজুর গাছ নেই বললেই চলে। আর যেগুলো রয়েছে তাও একেকটা থেকে একেকটার দূরত্ব বেশি হওয়ায় এখন আগের মত সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে না। গাছ কমে যাওয়ায় এ কাজ ছেড়ে দিয়েছেন অনেকে।
নূর-ই-আলম চৌধুরী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমিনুল ইসলাম জানান, অনেকেই খেজুর গাছ ইটভাটায় বিক্রি করে দিচ্ছেন। এতে করে গাছের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। তাই শীতের সকালে সোনালী রোদের সঙ্গে মিষ্টি খেজুরের রসের স্বাদ মানুষ ভুলতে বসেছে।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা পার্থ প্রতীম হীরা জানান, শিবচরে খেজুরের রস আহরণে গাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত গাছিরা। সেখান থেকে গাছিরা খেজুর রস সংগ্রহ করে বিভিন্ন ধরনের পিঠা ও মিষ্টান্ন তৈরি করে নিকটস্থ বাজারে বিক্রয় করে আর্থিকভাবে লাভবান হয়।