শিবচর (মাদারীপুর) প্রতিনিধি:
পদ্মাসেতু উদ্বোধনের পর পেরিয়ে গেছে এক মাসেরও বেশি সময়। মাদারীপুরের শিবচরবাসীর কাছে রাজধানী ঢাকা এখন হাতের মুঠোয়। রাজধানীতে কর্মরত শিবচরের অসংখ্য ব্যক্তি শুক্রবারকে সামনে রেখে বাড়ি ফিরেন। পরিবারের সাথে সময় কাটিয়ে আবার ফিরে যান কর্মস্থলে।
পদ্মাসেতু চালুর পূর্বে প্রতি সপ্তাহে বাড়ি ফেরার চিন্তা কল্পনাও করতে পারেননি তারা। কারণ বাড়ি ফিরতে নৌপথের ভোগান্তি আর ৪/৫ ঘন্টা সময় ব্যয়ের বিষয়টি ছিল অন্যতম। এছাড়া যাদের নিজস্ব গাড়ি রয়েছে, তারা ফেরিঘাটের অসহনীয় ভোগান্তির কথা চিন্তা করে দীর্ঘদিন পর পর বাড়ি আসতেন। অথচ সেতু চালুর পর যখন-তখন বাড়ি আসতে পারছেন তারা। এতে করে গ্রামের সাথে শহরে বসবাসরতদের আত্মিক টান বৃদ্ধি পাচ্ছে বলেও জানা গেছে।
শুক্রবারকে সামনে রেখে গ্রামের বাড়িতে আসা বেশ কয়েকজনের সাথে আলাপ করে তাদের এই অভিব্যক্তি জানা গেছে।
ঢাকার একটি ওষুধ কোম্পানিতে চাকুরি করেন ওয়াহীদুজ্জামান নামের শিবচরের এক যুবক। প্রায় প্রতি সপ্তাহে বাড়িতে আসা নিয়ে তিনি বলেন, শিবচর থেকে ঢাকার দূরত্বি ৬০ থেকে ৬৫ কিলোমিটার। বিরতিহীনভাবে গেলে মাত্র ১ ঘন্টাতেই পৌছানো যায়। সেতু চালুর পূর্বে রাজধানীর সাথে আমাদের যোগাযোগের বড় বাঁধা ছিল পদ্মা নদী। তখন ঢাকা থেকে বাসে করে পদ্মার পাড়ে নামতে হতো। নদী পার হতে লঞ্চ, ফেরিতে দেড়/দুই ঘন্টা ব্যয় হতো। তখন রাতে নদী পার হয়ে চলাচল ছিল অনেকটা অকল্পনীয় বিষয়! যাতে করে ইচ্ছা হলেও বাড়ি ফেরা হতো না। বিশেষ করে দুই ঈদেই বাড়ি ফিরতাম।
তিনি আরও বলেন, পদ্মাসেতু চালুর পর ঢাকা থেকে এক গাড়িতেই বাড়ির কাছে এসে নামতে পারছি। কোন ভোগান্তি নেই। বাড়ি ফিরতে অনিশ্চয়তাও নেই। একারনেই বৃহস্পতিবার অফিস শেষে সরাসরি বাড়ি চলে আসি। রোববার ভোরে গিয়ে অফিস করি। আমার মতো অনেক মানুষই এভাবে বাড়িতে চলে আসে।
মোঃ সিরাজুল ইসলাম নামের উপজেলার মাদবরের চর এলাকার এক চাকুরিজীবি বলেন, আগে বাড়ি ফিরতে নানা হিসাব-নিকাশ করতে হতো। এখন কোন ব্যাপারই না বাড়ি ফেরা। গভীর রাতেও বাড়ি আসা যায়। পদ্মাসেতু আমাদের জন্য আশীর্বাদ!
আ: রহমান বেপারী নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, গ্রামের সাথে টান বাড়ছে। আমরা এখন মন চাইলেই গ্রামে চলে আসতে পারছি। দুই/এক দিন কাটিয়ে আবার ঢাকা যাচ্ছি। সব মিলিয়ে অন্য রকম এক প্রশান্তি। পদ্মাসেতু যে কত বড় পরিবর্তন নিয়ে এসেছে তা বলে শেষ করা যাবে না।
সরেজমিনে শুক্রবার সকালে এক্সপ্রেসওয়ে ঘুরে দেখা গেছে, মহাসড়কে যানবাহনের বাড়তি চাপ রয়েছে। শুক্রবার ভোর থেকেই দূরপাল্লার পরিবহনের পাশাপাশি ব্যক্তিগত অসংখ্য গাড়ি গন্তব্যে যাচ্ছে। মহাসড়কের পাঁচ্চর, সূর্য্যনগর, পুলিয়া, মালিগ্রাম, ভাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে যাত্রীদের ভিড় অন্যান্য দিনের তুলনায় বেশি রয়েছে। ঢাকা থেকে এসে সকালে স্ট্যান্ডে নামছেন যাত্রীরা।
একাধিক বাস চালক জানান, প্রতি শুক্রবারই যাত্রীদের চাপ থাকে গাড়িতে। বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে শুক্রবার পর্যন্ত বাড়ি ফেরা যাত্রীদের সংখ্যা বেড়ে যায় অন্যান্য দিনের তুনায় কয়েকগুণ। মূলত পদ্মা সেতুর ফলে বাড়ি ফিরতে কোন ঝামেলা না থাকায় প্রতি সপ্তাহে শিবচরসহ আশেপাশের এলাকার মানুষ বাড়ি ফিরছে।
শিবচর হাইওয়ে থানা সূত্রে জানা গেছে, পদ্মাসেতু চালুর পর মহাসড়কে হাইওয়ে পুলিশের তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। একাধিক টিম এক্সপ্রেসওয়ের ভাঙ্গা থেকে পদ্মাসেতুর জাজিরা টোলপ্লাজা পর্যন্ত টহল অব্যাহত রয়েছে। এছাড়াও মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের চেকপোষ্টও থাকে।
শিবচর হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গাজী মো.সাখাওয়াত হোসেন জানান, পদ্মাসেতুর ফলে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের যাত্রাপথের ভোগান্তি দূর হয়েছে। এখন দক্ষিণাঞ্চল বিশেষ করে শিবচরের মানুষেরা প্রতি সপ্তাহে বাড়ি আসতে পারছেন। শুক্রবার ঘরমুখো মানুষের চাপও থাকে মহাসড়কে। দূরপাল্লার পরিবহনে আসার পাশাপাশি ব্যক্তিগত যানবাহনের চাপ শুক্রবার বেশি থাকে। হাইওয়ে পুলিশের টিম রাত-দিন মহাসড়কে দায়িত্ব পালন করছেন।