নদীমাতৃক আবহমান বাংলার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অন্যতম নৌকা বাইচ। প্রাচীন বাংলার এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে এখনো বর্ষা মৌসুম এলে গ্রাম নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয়। এই ধারাবাহিকতায় মাদারীপুরে আড়িয়াল খাঁ নদীতে পড়ন্ত বিকেলে হয়ে গেলো এক দৃষ্টিনন্দন নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা।
শুক্রবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে মাদারীপুর সদর উপজেলার পাঁচখোলা ইউনিয়নের মহিষেরচর ও জাফরাবাদ এলাকায় স্থানীয়দের আয়োজনে এই নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।
নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতায় জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত ১৮ টি নৌকা অংশগ্রহণ করে। প্রতিটি নৌকায় ৫০ থেকে ৬০ জন মাঝিকে নৌকার বৈঠা হাতে নিয়ে দেখা যায়। নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতায় ১৭ টি নৌকাকে পেছনে ফেলে খোয়াজপুর থেকে আসা জব্বার তালুকদারের পংখীরাজ নৌকা প্রথম স্থান অধিকার করে। এছাড়া মাহমুদপুর থেকে আসা বাবু ঢালীর বাচারি নৌকা দ্বিতীয় ও পাঁচখোলা ২ নং ওয়ার্ডের নৌকা তৃতীয় স্থান অধিকার করে। প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ীদের মধ্যে প্রথম পুরষ্কার হিসেবে ৩৬ ইঞ্চি এলইডি টিভি, ২য়, ৩য়, ৪র্থ ও পঞ্চম পুরষ্কার হিসেবে ২৪ ইঞ্চি ৪ টি এলইডি টিভি ও সান্ত্বনা পুরষ্কার হিসেবে পিতলের কলস ও মোবাইল ফোন তুলে দেওয়া হয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শুক্রবার বিকেলে পাঁচখোলা ইউনিয়নের মহিষেরচর এলাকায় আড়িয়াল খা নদীতে অনুষ্ঠিত হয় নৌকাবাইচ। সাজ সাজ রবে রঙ বেরঙের নৌকা আর হাজারো দর্শনার্থীতে পুরো এলাকা জুড়ে ছিলো খুশির আমেজ। মহিষেরচর এলাকা থেকে জাফরাবাদ দীর্ঘ দুই কিলোমিটার জুড়ে নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা দেখতে জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজারো নারী-পুরুষ, কিশোর ভীড় করে নদীর পাড়ে। অনেকে আবার নৌকা, ডিঙি নিয়ে এই নৌকা বাইচ উপভোগ করছিলো। নৌকা বাইচকে কেন্দ্র করে কিছুক্ষণের জন্য আড়িখাল খাঁ নদীর পাড় দর্শনার্থীদের ঢলে হয়ে উঠে এক মিলনমেলা।
সদর উপজেলার খোয়াজপুর থেকে নৌকা বাইচ নিয়ে আসেন জব্বার তালুকদার। এই মাঝি বলেন, আমাদের গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য এই নৌকা বাইচ। এখানে নৌকা বাইচ নিয়ে আসতে পারছি এটাই বড় আনন্দের। আমাদের নৌকা প্রথম হয়েছে। এই ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ দিন দিন আমাদের মধ্য থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। আমরা চাই এই ঐতিহ্য ধরে রাখতে আগামীতেও এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হোক।
লক্ষীপুর এলাকা থেকে আসা নকুল মন্ডল বলেন, আমরা খুব আনন্দিত নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে পেরে। আমরা নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে মানুষের আনন্দ দিতে পেরেছি, এখানেই আমাদের সার্থকতা।
ডাসার থেকে আসা দর্শনার্থী শাহাদাৎ আকন বলেন, এর আগে এতো সুন্দর নৌকা বাইচ দেখি নি। হাজার হাজার মানুষ নদীর পাড়ে এই প্রতিযোগিতা দেখতে এসেছে। আমি ভীষণ আনন্দিত। আমাদের দাবী এই গ্রাম বাংলার নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা সব সব আয়োজন করা হোক।
আরেক দর্শনার্থী জায়িমা আক্তার বলেন, আমি লক্ষীগঞ্জ থেকে পরিবারের সাথে নৌকা বাইচ দেখতে এসেছি। এতো নৌকা আর এতো লোক একসাথে কখনোই দেখি নি। আমার ভীষণ ভালো লেগেছে।
নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতার আয়োজন শাহীন ঘরামী বলেন, নৌকা বাইচ বাংলার এক ঐতিহ্য। এখন এটি বিলুপ্তির পথে। করোনাকালীন সময়ের পরে আমরা আবারো এই ঐতিহ্য ধরে রাখতে ও মানুষকে আনন্দ দিতে যুব সমাজ ও মুরব্বিদের পক্ষ থেকে এই নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছি। আমরা আশা রাখি আগামীতেও এই নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হবে।
[প্রিয় পাঠক, আপনিও শিবচর অনলাইনের অংশ হয়ে উঠুন। লাইফস্টাইলবিষয়ক ফ্যাশন, স্বাস্থ্য, ভ্রমণ, নারী, ক্যারিয়ার, পরামর্শ, এখন আমি কী করব, খাবার, রূপচর্চা ও ঘরোয়া টিপস নিয়ে লিখুন এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ছবিসহ মেইল করুন-smdelowar.press@gmail.com-এ ঠিকানায়। লেখা আপনার নামে প্রকাশ করা হবে।]