ঈদকে কেন্দ্র করে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ। ভোগান্তি এড়াতে নাড়ির টানে পদ্মা সেতু হয়ে গন্তব্যে ছুটছেন তারা। স্বপ্নের পদ্মাসেতু যুগ যুগ ধরে চলা ভোগান্তির অবসানে হাসি ফুটেছে কোটি মানুষের মুখে। রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা সেতু হয়ে স্বাচ্ছন্দ্য আর নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরতে পেরে খুশি সাধারণ যাত্রীরা।
শুক্রবার (৮ জুলাই) সকাল থেকে জাজিরা টোলপ্লাজা এলাকায় দেখা যায়, পদ্মা সেতু হয়ে মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, বরিশাল, ঝালকাঠি, খুলনা, বাগেরহাটসহ বিভিন্ন জেলার পরিবহনের চাপ বেড়েছে এক্সপ্রেসওয়েতে। তবে পদ্মা সেতু ও এক্সপ্রেসওয়েতে টোল দিতে একটু সময় ব্যয় হচ্ছে। এরপর মহাসড়কের কোথাও যানজটে পড়তে হচ্ছে না যাত্রীদের। নির্বিঘ্নে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছেন যাত্রীরা।
পাঁচ্চরের যাত্রী জহিরুল ইসলাম বলেন,পদ্মা সেতু ঢাকার সঙ্গে আমাদের যোগাযোগের চিত্র আমূল বদলে দিয়েছে। বাড়িতে যেতে এখন মাত্র এক ঘণ্টা পনের-বিশ মিনিট লাগছে! ভোরে রওনা দিয়ে সকালে বাড়ি ফিরে নাস্তা করা যায় এখন।
ফরিদপুরের ভাঙ্গা এলাকার যাত্রী সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ঈদে আনন্দ করার জন্য বাড়িতে রওয়ানা হয়ে ফেরিঘাটে সীমাহীন কষ্ট পোহাইতে হতো। পরিবার নিয়া এলে ছোট বাচ্চারা খুব কষ্ট করতো। ঢাকা থেকে বাসে উঠছি, বরিশাল যাবো। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে নদী পারাপার এখন তো কয়েক মিনিটের ব্যাপার।’
পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে বাড়ি যাচ্ছেন কলেজছাত্র রফিকুল ইসলাম । তিনি বলেন, ‘গ্রামে বাবার সঙ্গে গিয়ে গরু কিনবো। তাই আগে আগে যাচ্ছি। গত ঈদে তো বাড়ির সবাই চিন্তায় ছিল কীভাবে নদী পার হবো, কীভাবে কী করবো। এখন আর ওই চিন্তা নেই।’
পরিবহন চালকেরা বলছেন, এবার ঈদে বাড়ি ফিরতে নতুন অভিজ্ঞতা হচ্ছে যাত্রীদের। ঢাকা থেকে গাড়ি উঠলে একেবারে গন্তব্যে গিয়ে নামতে পারছেন তাঁরা। আগে বাড়ি ফিরতে যানজটে পড়ে চার-পাঁচ ঘণ্টা ব্যয় হতো। এখন মাত্র দু-তিন ঘণ্টা লাগছে গন্তব্য অনুযায়ী।
শিবচরের যাত্রী নাসির মিয়া বলেন, ‘ঈদের সময় দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের ভোগান্তির শেষ ছিল না। পদ্মা সেতু সেই ভোগান্তি দূর করেছে। গত ঈদেও নৌযানে পার হতে নানা ভোগান্তির শিকার হতে হয়। স্পিডবোটে দিতে হতো বাড়তি ভাড়া। সঙ্গে চালকদের বাজে ব্যবহার। বৃষ্টি নামলে তো দুর্ভোগের শেষ থাকত না ঘাট এলাকায়। বাড়ি ফিরতে দুশ্চিন্তায় থাকতে হতো ঠিকমতো পদ্মা পার হতে পারব কিনা। আর এবার চিত্র পুরোপুরি পাল্টে গেছে। বাড়ি ফেরার প্রতিযোগিতায় নামতে হচ্ছে না।
শিবচর হাইওয়ে থানা সূত্রে জানা গেছে, ঈদকে সামনে রেখে পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তের টোল প্লাজা থেকে শুরু করে ভাঙ্গা উপজেলার বগাইল এক্সপ্রেসওয়ে টোল প্লাজা পর্যন্ত ২৭ কিলোমিটার সড়কে হাইওয়ে পুলিশের টহল রয়েছে। ঈদে ঘরমুখী মানুষের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে এ বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে হাইওয়ে পুলিশ। এর মধ্যে ২৪ ঘণ্টাই থাকছে টহল। সড়কের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে চেকপোস্ট, ভ্রাম্যমাণ টিম, কুইক রেসপন্স টিমসহ একাধিক ব্যবস্থা। মহাসড়কে যাতে যানজট সৃষ্টি না হয় সে জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রেখেছে হাইওয়ে পুলিশ।
শিবচর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গাজী মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘এবারের ঈদ যাত্রায় নৌপথের কোনো ভোগান্তি নেই যাত্রীদের। প্রথমবারের মতো এবারের ঈদযাত্রা হবে অন্য রকম আনন্দের। মহাসড়কে যেন ঘরমুখী মানুষের কোনো দুর্ভোগ না হয়, সেদিকে আমাদের সতর্ক দৃষ্টি রয়েছে। ঈদের পর সাত দিন পর্যন্ত এ বিশেষ কার্যক্রম থাকবে। যাতে করে ফিরতি পথেও যাত্রীদের কোনো ভোগান্তি না হয়।’
এস.এম.দেলোয়ার হোসাইন
মাদারীপুর
০১৭১৬৬৮৮৬২২