শিবচরে পাট নিয়ে বিপাকে কৃষকরা

অন্যান্য কৃষি ঢাকা মাদারীপুর শিবচর
এস.এম.দেলোয়ার হোসাইন, শিবচর (মাদারীপুর) প্রতিনিধি:

সোনালী আঁশ হিসাবে পরিচিত পাট। ভালো দাম পাওয়ায় মাদারীপুর শিবচরে প্রতিবছর পাটের আবাদ বাড়ছে। এবার শিবচর সর্বত্রই পাটের ভালো ফলন হয়েছে। কিন্তু পানির অভাবে পাট পচানো নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। ভরা বর্ষা মৌসুমেও শিবচরে খালে বিলে পানি আসেনি। পানির অভাবে কৃষকরা পাট কাটতে পারছেন না। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যে পাট কেটে পানিতে জাগ দিতে না পারলে পাট জমিতেই মরে যাবে।

শিবচর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে পাট আবাদ ও ৫০০ হেক্টর  জমিতে মেস্তা/ কেনাফ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এর মধ্যে ১৩ হাজার ৭৭৫ হেক্টর জমিতে পাট আবাদ ও ৫১০ হেক্টর জমিতে মেস্তা/ কেনাফ আবাদ হয়েছে। কৃষি বিভাগ আশা করছে শিবচরে এ বছর ২৬ হাজার ৫৪৬ হাজার মে. টন পাট ও ৯৬৯ মে. টন মেস্তা/ কেনাফ উৎপাদিত হবে। গত বছর দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকরা এবার পাট চাষের দিকে বেশি ঝুঁকেছেন। শিবচরের পাটের চাহিদা রয়েছে সারা দেশে।

শিবচর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, পানি না থাকায় কৃষকরাই চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। উপজেলার নদী, মাছ চাষের পুকুর, খাল, বিলে, কোথাও পর্যাপ্ত পানি না থাকায় পাট জাগ দিতে পারছে না তারা। কোনো উপায় না পেয়ে কৃষকরা পাট কেটে ক্ষেতেই ফেলে রাখছেন।

আবার কেউ কেউ পর্যাপ্ত পানি না পেয়ে নিচু জায়গায় জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে জাগ দিচ্ছেন । তবে পাটের ফলন ভালো হলেও পর্যাপ্ত পানির অভাবে পাটের আঁশ আর সোনালি না থেকে কালো রঙের ফ্যাকাসে হয়ে যাচ্ছে। এতে পাটের বাজারমূল্য অনেক কম হবে বলে আশংকা কৃষকদের।

সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন মাঠে গিয়ে দেখা যায়, বেশির ভাগ জমির পাট কাটা শুরু হয়েছে। বৃষ্টি না হওয়ার কারণে মাঠে পানি জমেনি। জমি থেকে নদী বা খালের দূরত্ব অনেক দূর। যে কারণে সেখানে পাট নেয়া কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। অনেকে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে নছিমন ও ভ্যানে বোঝাই করে নদী বা খালে নিয়ে ফেলছে। তবে কিছু কিছু জমির পাট কেটে মাথায় করে খালে, বাড়ির পুকুরে জাগ দিচ্ছেন কৃষকরা। জমি থেকে অনেক দূরে পাট নিয়ে জাগ দেওয়ার কারণে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

কুতুবপুর এলাকার জলিল ফকির নামে এক কৃষক বলেন, এ বছর বৃষ্টির পরিমাণ খুবই কম, আষাঢ় মাস শেষ হয়ে গেছে এখনো খালে বিলে কোথায়ও পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি নেই, বন্যার পানির আশায় আছি। খালে সামান্য বৃষ্টির পানি জমছে সেখানে পাট জাগ দিতে হচ্ছে। কম পানিতে পাট জাগ দেওয়ায় পাটের আঁশ কালো হয় বলে তা কম দামে বিক্রি করতে হয়। পাটের ফলন এবার ভালো হলেও পর্যাপ্ত পানির অভাবে আঁশ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।

বহেরাতলা ও কাদিরপুর এলাকার পাটচাষি, আসান মোড়ল নছের আলী ও ইয়াছিন বলেন, পাটের ভালো দাম পাওয়ায় এবার বেশি জমিতে পাট চাষ করেছি, ফলনও খুব ভালো হয়েছে। কিন্তু আমরা খুব দুশ্চিন্তায় আছি পাট পচানো নিয়ে। এখনো পানির কোনো খবর নাই। কয়েকদিনের মধ্যে খাল বিল ও জমিতে পানি না আসলে পাট পচানো যাবে না। আমরা একবারে নিঃস্ব হয়ে যাবো।

শিবচর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অনুপম রায় বলেন, পাট চাষ এবার লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করেছে। এখন পাট কাটার সময় চলছে। কিন্তু বৃষ্টির অভাবে কৃষক পাট নিয়ে হতাশায় পড়েছে। এছাড়া বৃষ্টির অভাবে জমিতে পর্যাপ্ত রস না থাকায় পাট শুকিয়েও যাচ্ছে। ভারী বর্ষণ না হলে খাল-বিলে পানি জমবে না। বর্তমান পাটের বাজারমূল্য যা আছে তাতে চাষিদের লোকসান হবে না। তবে দাম কমে গেলে চাষিরা সমস্যায় পড়বেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *