এস.এম.দেলোয়ার হোসাইন, নিজস্ব প্রতিবেদক: পবিত্র মাহে রমজানের ২২তম দিন আজ। আজকের ছুটির দিনে (শুক্রবার) মাদারীপুরের শিবচরে প্রতিটি মার্কেটেই ক্রেতার উপস্থিতি ছিল দেখার মতো। পণ্যের চড়া দামেও শিবচরে জমে উঠেছে ঈদের কেনাকাটা। বিভিন্ন মার্কেট ও বিপণিবিতানগুলোতে বাড়ছে ভিড়। মধ্যরাত পর্যন্ত চলছে বেচাকেনা। ক্রেতাদের এমন ভিড়ে খুশি ব্যবসায়ীরা। তবে অতিরিক্ত দামে ক্ষুব্ধ ক্রেতারা।
গভীর রাত পর্যন্ত সরগরম শিবচর উপজেলার বিভিন্ন মার্কেট ও বিপণিবিতানগুলো। এর মধ্যে সদর রোড, ইলিয়াস আহম্মেদ চৌধুরী সুপার মার্কেট, খলিফাপট্টি, মোল্লা মার্কেট ও সোনার বাংলা প্লাজারসহ বিভিন্ন মার্কেটে ভিড় রয়েছে। মার্কেটের সামনে শুরু করে মূল দোকানের ভেতরে কোথাও যেন পা ফেলার জায়গা নেই। সবখানেই মানুষ আর মানুষ।
ঈদের মার্কেটগুলোতে দখল করে আছে দেশি-বিদেশি বাহারি রংয়ের পোশাক। সাদ আর সাধ্যের মধ্যে কেনাকাটা করছেন ক্রেতারা। তবে অতিরিক্ত দামে ক্ষুব্ধ তারা। যদিও ভোক্তা স্বার্থ রক্ষায় নিয়মিত অভিযান চলছে।
শুক্রবার (১৪ এপ্রিল) শিবচরের বিভিন্ন মার্কেট ও বিপণিবিতানগুলোতে ঘুরে এমনই চিত্র দেখা গেছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, শিবচরের খলিফা পট্টি মার্কেটে শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন হিসেবে সকাল থেকেই ক্রেতা ছিল। তবে দুপুরের পর থেকে ক্রেতার উপস্থিতি আরো বাড়তে থাকে। ক্রেতা আসছে, থরে থরে সাজানো বাহারি সব ড্রেস দেখছে, কিনছে। সবার হাতে ব্যাগ আর ব্যাগ। পছন্দের পোশাক কিনতে দেখা যায় তাদের।
খলিফাপট্টি ঈদের বাজার করতে আসেন জামাল আহম্মেদ ও নুসরাত জাহান। তারা দুইজন স্বামী-স্ত্রী। তারা জানান, ঈদের জন্য নতুন পোশাক কিনতে আজকে এসেছেন। চাকরি করেন তাই ছুটির দিনটিকে মার্কেটের জন্য বেছে নিয়েছেন তারা।
জামাল আহম্মেদ বলেন, ঈদের তো আর বেশি দিন বাকি নেই। আমরা চাকরি করি সময়ও পাই না। অনেক আগে থেকেই আমরা পরিকল্পনা করে রেখেছি আজকে মার্কেটে আসব। জুমার নামাজের পর এসেছি। এখন ঘুরে ঘুরে দেখছি। পাঞ্জাবি আগে দেখব। এবারের ঈদে নতুন কি পোশাক ক্রয় করা হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে নুসরাত জাহান বলেন, আমি অনলাইনে শাড়ি কিনেছি। এখন চুড়ি আর জুতা কেনার পরিকল্পনা আছে।
ঈদ বাজারে নারী ক্রেতারা সবচেয়ে বেশি কিনছেন নায়রা, গারারা, সারারা, সুষমিতা, কাতান ওড়না, ভিক্টোরিয়া, লেহেঙ্গা ও পার্টি গাউন নামে বিভিন্ন থ্রি-পিচ। তবে চাহিদা কম নয় শাড়িরও। গাদোয়াল, মাদুরাই, কাঞ্জিভরম, সাউথ ইন্ডিয়ান, সফট কাতান, বারিশ, বেনারসি, ঢাকাই জামদানি ও টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়িও বিক্রি হচ্ছে বেশ।
পাঁচ্চরের বিভিন্ন মার্কেটে ঘুরে দেখা যায়, নিজ ও প্রিয়জনের জন্য ঈদের কেনাকাটা করছেন অনেকে। শেষ দিকে ভিড় বাড়ার আশঙ্কায় আগেভাগেই বেছে নিচ্ছেন পছন্দের পোশাক। বড়দের পাশাপাশি শিশু কিশোরের উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মতো। ছুটির দিনে বাবা মায়ের হাত ধরে শিশুরা এসেছে পছন্দের পাঞ্জাবি, জামা ও জুতা কিনতে। ক্রেতা মো: রোমান জমাদ্দার জানান, বন্ধের দিন হওয়ায় পরিবারের সবাইকে নিয়ে মার্কেটে আসার সুযোগ পেয়েছি। আর এখন তুলনামূলক ভিড় কম থাকবে, সেটা ভেবে এসেছিলাম। এসে দেখি ভিড় অনেক। তাছাড়াও এবারের ঈদবাজারে আগের বছরের তুলনায় দাম বেশি।
কেনাকাটা করতে আসা স্কুল শিক্ষক শহিদুল ইসলাম বলেন, পাঁচ্চরের বেশ কয়েকটি মার্কেটে ঘুরেছেন তিনি। পণ্যের দাম বেশি হওয়ায় কয়েকটি মার্কেটে পোশাক দেখে শিবচরে চলে এসেছেন। শিবচরে এসেও চড়া দামে তার পোশাক কিনতে হয়েছে। তার দাবি, পোশাকের কোয়ালিটির সঙ্গে দামের অনেক পার্থক্য রয়েছে।
পোশাক কেনাকাটা শেষে সবাই ছুটছেন জুতা ও কসমেটিকসের দোকানে। ৭১ সড়কে সংলগ্ন দোকানে জুতা কিনতে আসা নাসির উদ্দিন বলেন, ঈদের জন্য নতুন শার্ট ও প্যান্ট কিনেছেন তিনি। নতুন জুতা কিনতে এসেছেন। তবে জুতার দামও চড়া।
মোল্লা মার্কেটে ভ্রাম্যমাণ দোকানে কসমেটিকস হাউজে আসা নওরিন আক্তার আয়শা, মিমি, কলেজ শিক্ষার্থী সুমাইয়া, রাবেয়া আক্তার জানান, তাদের কেনাকাটা শেষ। শুধুমাত্র গলার নেকলেস, চুড়ি ও নুপুর কিনতে কসমেটিকস দোকানে এসেছেন। সবকিছুর দাম চড়া হলেও ঈদ উদযাপন করতে সবকিছুই কিনতে হয়েছে।
দোকানদার শাহ জালাল বলেন, আলহামদুলিল্লাহ, ভালো বেচাকেনা হচ্ছে। ক্রেতাদের রোজার শেষের দিকে সবসময় মার্কেট করতে দেখা যায়। কিন্তু এবার ভিন্ন মনে হচ্ছে। মাসের শুরুতেই কেনা কাটার মনোযোগ দেখতেছি। গত দুই-তিনটা ঈদেতো ভালো ব্যবসা করতে পেরেছি। আশা করছি, এবারো ভালো কিছু হবে।
তিনি আরো বলেন, ঈদ উপলক্ষে আধুনিক ও বাহারি নকশার পোশাক এনেছেন। যা সহনীয় দামে বিক্রি করছেন। তবে নারী ক্রেতাদের থ্রি–পিচের প্রতি আগ্রহ বেশি।
এদিকে ৭১ সড়কের পাঞ্জাবি দোকানগুলোতে ভিড় দেখা যায়। সেখানে বাহারি ডিজাইনের পাঞ্জাবি পছন্দ করছেন ক্রেতারা। কেউ নামীদামী ব্র্যান্ড, আবার কেউ পাঞ্জাবি দোকান থেকে পছন্দের পাঞ্জাবি কিনতে দেখা যায়। ১ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকার পাঞ্জাবির দিকেই অনেকের মনোযোগ। তবে ২ হাজারের নিচের ক্রেতাই বেশি বলে জানান বিক্রেতারা।