ভুট্টা চাষ করে সফলতার স্বপ্ন বুনছেন মাদারীপুর শিবচরের ভুট্টা চাষিরা। অন্যান্য ফসলের তুলনায় অধিক লাভজনক হওয়ায় ভুট্টা চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা। জমিতে ফুল ও সবুজ পাতার ফাঁকে ভুট্টার মোচা আসতে শুরু করেছে । আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছর ভালো ফলন হবে বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ।
উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ভুট্টা চাষে দরিদ্র কৃষকেরা আর্থিকভাবে সফল হয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। চলতি বছরে ৫৫০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছে। মানুষের খাদ্যের পাশাপাশি মাছ, হাঁস-মুরগির খাদ্য হিসেবে ভুট্টার ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় এর চাহিদাও বেড়েছে অনেক বেশি।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, এলাকায় মাঠের পর মাঠ ভুট্টাক্ষেত। সবুজ রঙের গাছগুলো দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়। ক্ষেতগুলোতে পানি ও কীটনাশক দেওয়া এবং পরিচর্যায় কৃষকেরা ব্যস্ত সময় পার করছে। ক্ষেতগুলোতে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও কাজ করছে।
ভান্ডারিকান্দি ইউনিয়নের কৃষক রহিম মিয়া বলেন, তিনি ৩৩ শতাংশ জমিতে ভুট্টার আবাদ করেছেন। কৃষি বিভাগ থেকে তাঁর জমিতে প্রদর্শনী প্লট করা হয়েছে। এ জন্য কৃষি বিভাগ বিনা মূল্যে প্রয়োজনীয় বীজ ও রাসায়নিক সার দিয়েছে। ফলে তাঁর মাত্র ৩ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।
চরজানাজাত এলাকার ভুট্টাচাষি জলিল মাতুব্বর বলেন, ‘এ বছর ৪০ শতাংশ জমিতে ভুট্টা আবাদ করেছি। ধানের চেয়ে কম খরচে দ্বিগুণ ভুট্টা উৎপাদন করা যায়। অনেক আশা করে ভুট্টা রোপণ করেছি, বাম্পার ফলন ফলন হবে। তবে ন্যায্য দাম পেলে কষ্ট সার্থক হবে এবং পরিবার-পরিজন নিয়ে সুখে থাকতে পারব।’
বাজিতপুর এলাকার কৃষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, এবার দুই বিঘা জমিতে উচ্চ ফলনশীল জাতের ভুট্টার চাষ করেছি। তুলনামুলক কম খরচে ও স্বল্প সময়ে এ ফসল ঘরে তোলা যায়। বর্তমান বাজারে চাহিদা ও দাম দুটোই ভালো রয়েছে। আগামী দেড় মাসের মধ্যে ভুট্টা সংগ্রহ ও মাড়াই শুরু হবে।
কাদিরপুর এলাকার ভুট্টা চাষি খলিল মোল্লা বলেন, আমি এই বছর দেড় বিঘা জমি কট নিয়ে ভুট্টা চাষ করেছি। আশা করছি ভালো ফলন হবে, তাছাড়া ভুট্টা বাজারে সব সময় ভালো দাম থাকে। ভুট্টা দিয়ে খই হয়, গোখাদ্য, মুরগীর ফিট মাছের ফিট এবং পাপ্পন আটা ইত্যাদি হয়ে থাকে।
ভান্ডারীকান্দি ইউনিয়নের দায়িত্বরত উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা হাসান বিন মোস্তফা বলেন, আশা করছি এবছরও ভুট্টার ভালো ফলন হবে। এলাকার কৃষকেরা যাতে ভুট্টা যথাযথভাবে উৎপাদন করতে পারেন এবং স্বল্প খরচে উচ্চফলনশীল ভুট্টা উৎপাদনে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
সন্যাসীরচর ইউনিয়নের দায়িত্বরত উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা পার্থ প্রতীম হীরা জানান, উৎপাদন খরচের চেয়ে লাভ বেশি হওয়ায় শিবচর উপজেলায় ভুট্টার আবাদ হয়েছে। তাছাড়া ভুট্টা মানুষের জন্য যেমন পুষ্টিকর তেমনই এটি এখন পোল্ট্রি ও মাছের খাবারসহ বিভিন্ন খাবারে যুক্ত হয়েছে। আমরা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা স্যারের দিকনিদের্শনায় ভুট্টা চাষিদের বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতা করে যাচ্ছি।
শিবচর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, ভূট্টা একটি লাভজনক ফসল। তাছাড়া কম সময়ে অধিক লাভ হওয়ায় কৃষকরা ভুট্টা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। জমিতে রোগবালাই দমন ও স্বল্প খরচে উচ্চ ফলনশীল ভুট্টা উৎপাদন করতে পারে এ জন্য মাঠপর্যায়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা নানা পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। আশা করছি এবছরও ভুট্টার ভালো ফলন হবে।