শিবচরে সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহে ব্যস্ত মৌচাষিরা

অন্যান্য কৃষি মাদারীপুর শিবচর
এস.এম.দেলোয়ার হোসাইন:

মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার বিভিন্ন দিগন্ত ফসলের মাঠ জুড়ে অপরূপ সৌন্দর্য ছড়িয়ে রয়েছে। চারদিকে সরিষা ফুলের হলুদের সমারোহ। যেদিকে তাকাই মনে হয় যেন হলুদ চাদরে ঢেকে আছে ফসলের মাঠ। মধু চাষীরাও ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন সরিষার ক্ষেত থেকে মধু সংগ্রহে। ফসলের জমির পাশে পোষা মৌমাছির শত শত বাক্স নিয়ে হাজির হয়েছেন মৌয়ালরা। ওই সব বাক্স থেকে হাজার হাজার মৌমাছি উড়ে গিয়ে মধু সংগ্রহে ঘুরে বেড়াচ্ছে সরিষা ফুলের মাঠে।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মতে, এ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ২৩ জন মৌচাষি ১৬১০টি মৌ বাক্সের মাধ্যমে  মধু সংগ্রহ করা হচ্ছে। সাধারণত অগ্রহায়ণ ও পৌষ মাসে বেশি পরিমাণে মধু সংগ্রহ করা যায়। মৌবাক্সের মাধ্যমে মধু সংগ্রহে মৌচাষি ও শর্ষেচাষি—উভয়ই লাভবান হয়ে থাকেন বলে জানিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তারা। তাঁরা বলেন, মধু চাষের মাধ্যমে মৌচাষিরা যেমন বাড়তি আয় করেন, তেমন মৌমাছির পরাগায়নের মাধ্যমে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।

মৌচাষীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চাষীরা সাধারণত পছন্দের একটি সরিষা ক্ষেতের পাশে খোলা জায়গায় চাক ভরা বাক্স ফেলে রাখেন। একেকটি বাক্সে মোম দিয়ে তৈরি ছয় থেকে সাতটি মৌচাকের ফ্রেম রাখা হয়। আর তার ভেতর রাখা হয় একটি রাণী মৌমাছি। রাণী মৌমাছির কারণে ওই বাক্সে মৌমাছিরা আসতে থাকে। মৌমাছিরা ফুল থেকে মধু এনে বাক্সের ভেতরের চাকে জমা করে। আর এই চাক থেকেই মধু সংগ্রহ করেন মৌমাছি চাষীরা। প্রতিদিন সকাল ৮ টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত মৌ-চাষিরা এসব মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহ করেন। মৌ চাষের মাধ্যমে চাষীরা একদিকে যেমন আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন, অন্যদিকে দূর হচ্ছে বেকারত্ব। এসব সরিষা ফুলের মধু খাঁটি ও সুস্বাদু হওয়ায় দেশের বিভিন্ন স্থানসহ বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে।

সরিষা ফুল থেকে মধু আহরণের পদ্ধতি সম্পর্কে সুলতান মিয়া নামের এক মৌয়াল বলেন, ‘মধু সংগ্রহের জন্য কাঠ দিয়ে তৈরি করা হয় এক প্রকার বিশেষ বাক্স। ওই বাক্সের ভেতরে মোম দিয়ে বানানো একটি সিড লাগানো হয়। তারপরেই বাক্সের মধ্যেই রাখা হয় ‘রানি মৌমাছি।’ রানির আকর্ষণে সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে পুরুষ মৌমাছিরা।’

মৌবাক্স পরিচর্যাকারী শ্রমিক হাসিবুল হোসেন বলেন, সপ্তাহে এক দিন মৌবাক্স থেকে মধু সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। প্রতিটি বাক্স থেকে গড়ে দুই কেজি মধু পাওয়া যায়। ১০০ বাক্স থেকে সপ্তাহে ২০০ কেজি মধু সংগ্রহ করা যায়।

সাতক্ষীরা থেকে আসা মৌচাষি আ: রহিম মিয়া বলেন, আমি সাতক্ষীরা থেকে মধু সংগ্রহ করতে এসেছি। আমি দশ বছর ধরে মধু সংগ্রহ করি। আমার কাছে তিনশত বাক্স রয়েছে যা থেকে প্রতি সপ্তাহে ৭-৮ মণ মধু হয়।

সন্যাসীরচর ইউনিয়নের দায়িত্বরত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা পার্থ প্রতীম হীরা বলেন, শিবচর উপজেলায় মৌচাষিরা মধু সংগ্রহ করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। মৌমাছিরা ফুলের পরাগায়ন ঘটিয়ে বনজ, ফলদ ও কৃষিজ ফসলের উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়। এক ফুলের পরাগরেণু অন্য ফুলের গর্ভমুন্ডে পড়লে পরাগায়ন ঘটে। যার ফলশ্রুতিতে ফসলের প্রায় ১০ থেকে ১৫ ভাগ উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। তাই বলা যায়, মৌচাষিরা যেমন লাভবান হচ্ছেন তেমনি কৃষকেরাও ফসল উৎপাদনে লাভবান হচ্ছেন।

শিবচর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলে সরিষা ফুল থেকে মধু উৎপাদনের প্রধান মৌসুম। উপজেলায় চলতি মৌসুমে ৪ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের সরিষা চাষ হয়েছে। বাক্স পদ্ধতি ব্যবহার করে বাণিজ্যিকভাবে সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে থাকেন মৌয়ালরা। সরিষা ফুল থেকে সংগ্রহ করা মধু গুণে মানে অত্যন্ত ভালো।

তিনি আরো বলেন, সরিষা চাষিদের ও মৌ বাক্স স্থাপনকারীদের উৎসাহ দেয়া হচ্ছে। এছাড়াও আমরা নানাভাবে কৃষকদের পরামর্শ ও উৎসাহিত করছি যাতে সরিষা ক্ষেতে মৌ বাক্স স্থাপনের মাধ্যমে মৌচাষ করে তারা আর্থিকভাবে লাভবান হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *